দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল নিতে জামালগঞ্জের রাজাবাজ গ্রামে দু’দফা সন্ত্রাসী হামলা।সংঘর্ষে আহত ১৫।

: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নে দেবোত্তর সম্পত্তির দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজাবাজ গ্রামের লোকজনের উপর সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে ভীমখালী ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের আব্দুস সোবহান, একরাম উল্লাহ, রুস্তুম আলী,লাল মিয়া গং এর নেতৃত্বে শতাধিক লোকের লাঠিয়াল বাহিনী। এঘটনায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষে ১৫জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ৭জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ৬জনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন, পুরাতন রাজাবাজ গ্রামের বিপ্রেশ তালুকদার (৪০),পিন্টু তালুকদার (৩৫) মিন্টু তালুকদার (৪০), বকুল তালুকদার (৪৫), বিজিত তালুকদার (৩২), হীরা তালুকদার (৪০), লক্ষীকান্ত তালুকদার (৫০), সাগর তালুকদার (২৫),পুতুল তালুকদার (৪০), বাপ্পী রাণী তালুকদার (৪০), প্রদীপ তালুকদার (৩৫) এবং পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের হাফিজ উদ্দিন (৪৫), হালিম উদ্দিন (৪০), মাইন উল্লাহ (২৫), ফারুক মিয়া (৩২)।

জামালগঞ্জ থানাপুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এসময় ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার ও ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। তারা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বিষয়টি আপোষ মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন।

সরজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, হিন্দু অধ্যুষিত প্রাচীন বসতি রাজাবাজ গ্রামে কালীমন্দিরের নামে ডোবা/পুকুর  আকারের (ঘটনাস্থল) প্রায় ১একর ২৪ শতাংশ দেবোত্তর ভূমি রয়েছে। যার, দাগনং-৫৪, খতিয়ান নং-২৫২, জেএলনং-৬০, মৌজা রফিনগর। গ্রামবাসীর যৌথ তালুক মালিকানা থেকে  উক্ত ভূমি স্থানীয় কালীমন্দিরের নামে উৎসর্গ করেন রাজাবাজ গ্রামের লোকজন। এই ডোবা বিক্রির আয় দিয়ে রাজাবাজ গ্রামের লোকেরা তাদের বিভিন্ন পূজা-পার্বন ও অনুষ্ঠানাধির আর্থিক সংস্থান করে থাকেন। উক্ত ডোবায় দীর্ঘদিন ধরে তালুক মালিকানা দাবী করে আসছেন পার্শ্ববর্তী ভীমখালী ইউনিয়নের নতুন বসতি পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের কতিপয় লোকজন। এনিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এরই একপর্যায়ে উক্ত ডোবা থেকে হিন্দু রাজাবাজ গ্রামের এক কৃষক ধান ক্ষেতে পানি সেচ করতে গেলে গতকাল (১২ফেব্রুয়ারি) লাঠিসোটা নিয়ে গিয়ে তাকে পানি সেচে বাঁধা দেয় পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের সংগঠিত একদল লোক।

পুরাতন রাজাবাজ গ্রামের জনৈক কৃষককে মারধর করে পানি সেচের পাম্পমেশিন ছিনিয়ে নিতে গেলে তার আর্তচিৎকারে আশপাশের গ্রামের লোকজন জড়ো হন। এক পর্যায়ে পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের সশস্ত্র লোকেরা পুরাতন রাজাবাজ গ্রামের নিরীহ লোকদের উপর স্লোগান দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ঘন্টাব্যাপী উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়। উপস্থিত আশপাশ গ্রামের উপস্থিত লোকজনের মধ্যস্থতায় একপর্যায়ে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ থামানো  হয়।

সংঘর্ষে উভয়পক্ষে গুরুতর আহত ১৩জনকে তাৎক্ষণিক  সিলেট ও সুনামগঞ্জ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এরপরই দ্বিতীয় দফায় পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের লাঠিয়াল বাহিনী পুরাতন রাজাবাজ গ্রামে বাড়ি-ঘরে গিয়ে মহিলাদের উপর হামলা চালায় ও দোকান লুটপাট করে। এসময় বাড়িতে থাকা মহিলাদের বেপরোয়া মারধর করে ও বাপ্পী রাণীকে মারধর করে তার দোকান ঘরে লুটপাট চালিয়ে দোকানে থাকা নগদ টাকা, এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও মালামাল নিয়ে যায়।

এই ঘটনায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পুরাতন রাজাবাজ গ্রামের লোকজন জানান, পূর্ব-রাজাবাজ গ্রামের দাঙ্গাবাজ  লোকেরা আবারো হামলা চালানোর জন্য দিনভর অস্ত্র-শস্ত্র জড়ো করছে। তারা যে কোনো সময় আবারো হামলা চালাতে পারে বলে আশংকা করছেন পুরাতন রাজাবাজ গ্রামের লোকেরা।

এব্যাপারে ফেনারবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার ও ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, তারা আজ (১৩ফেব্রুয়ারি)সরজমিন গিয়ে উভয় পক্ষকে কোন রকম বিশৃঙ্খলা না করতে ও শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে এসেছেন। তারা আরো জানান, এবিষয়ে আগামী শনিবার (১৫ফেব্রুয়ারি) জামালগঞ্জ থানায় বসে থানার অফিসার ইনচার্জসহ বিষয়টি আপোষ মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এবিষয়ে জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো.সাইফুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিক থানাপুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তিনি আরো জানান, লাগোয়া দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেখানে গিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি থানায় বসে আপোষ, মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরপরও যদি পুনরায় উভয়পক্ষে এনিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়, তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *